#বাড়িওয়ালার_দুষ্টু_মেয়ে

(১ম পার্ট)

Writer:-  SA Shaheen Alam

.

.



দীর্ঘ ১ রাত বাস যাত্রার পরে আমি

ঢাকা নামক গোলক ধাঁধার

শহরে এসে পৌছালাম।

বাস থেকে নেমে স্টেশনের পাশে

একটা চা'য়ের দোকানে গিয়ে বসলাম।

দোকানদার'কে বললাম, এক কাপ রঙ

চা দিতে। দোকানদার এক কাপ রঙ চা দিল।

আমি চা'য়ে চুমুক দিতে দিতে

দোকানদার'কে বললাম,

.

-- চাচা, থাকার জন্য আশেপাশে

কোনো বাসা ভাড়া পাওয়া

যাবে.?

.

দোকানদার উনার পান খাওয়া

লাল দাঁত বের করে, সামান্য

হেসে বলল,

.

-- শহরে নতুন আইছেন

নাকি.?

.

-- হ্যা।

.

-- বিয়া করছেন.?

.

-- না, পড়ালেখা করছি। বিয়ের এখনো

অনেক দেরি আছে।

কেন.?

.

-- তাইলে মশাই, বাসা ভাড়া পাইতে

বহুত কষ্ট হইবো।

ঢাকা শহরে ব্যাচেলরগো কেউ বাসা

ভাড়া দিবার চায় না।

.

-- কেন.?

.

-- কেন আবার, যুগ-জামানা ভালা না।

ক্যাডা কোন আকাম-কুকাম

কইরা বসে তার কোনো ভরসা

আছে.? ভরসা নাই।

.

আমি দোকানদার'কে তেল

মেরে বললাম,

.

-- চাচা, আপনি একটু ব্যবস্থা করে দেন না, প্লিজ.!

আমি তো আপনার ছেলের বয়সি.!

একটা বাসা ভাড়া করে দিন, প্লিজ.!

আমি এখানকার কাউকেই চিনি না যে, তার কাছে সাহায্য চাইবো।

তাছাড়া আমার এখানে কোন

আত্মীয়-স্বজনও নেই, যে তাদের কাছে

গিয়ে উঠবো।

.

আমার কথা শুনে দোকানদার

বিরক্তির স্বরে বলল,

.

-- বাবা, আমি বাসা কই পামু.?

তাছাড়া আমার জানামতে আশেপাশে

বাসা ভাড়া পাওন যায় না।

তুমি অন্য কোনো হানে দেখো।

.

কথাটা বলে দোকানদার তার কাজে

মনযোগ দিলেন। আমি আর কিছু বললাম না।

দোকানদার'কে আর বিরক্ত করতে

ইচ্ছা করলো না।

.

সত্যি কথা বলতে, এই ঢাকা শহরে কেউ

কারো জন্যে না। এখানে সবাই শুধু নিজেরটা

বোঝে। কাউকে সাহায্য করার মতো

কারো সময় নেই।

সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত.! অন্যদের নিয়ে

কারো মাথাব্যথা নেই।

নিজে ভালো থাকলেই সব ভালো.!

.

.

.

আমি চায়ের বিল মিটিয়ে রাস্তার পাশে একটা গাছের নিচে এসে দাঁড়ালাম।

চারিদিকে তাকিয়ে আশেপাশের

পরিবেশটা দেখতে লাগলাম।

চারিপাশে কি বড়বড় সব দালান-কৌঠা.! কি বিশাল বাড়ি.! বাড়ির চারিদিকে সুন্দর সুন্দর

ফুলের গাছ.! দেখতেই চোখ জুরিয়ে গেল

আমার.!

.

আমি আশেপাশে কিছুক্ষণ তাকাতাকি

করে হাঁটতে লাগলাম।

এই ইট-পাথরের শহরে যে ভাবেই হোক

একটা থাকার জায়গা খুজতে হবে।

.

হটাৎ পকেটে থাকা ফোনটা বেঁজে উঠলো।

ফোন বের করে দেখি চাচি কল করেছে।

আমি কল রিসিভ করে ফোন

কানে ধরলাম,

.

-- হ্যালো, চাচি.!

.

-- হুমম, বাবা কেমন

আছিস.?

.

-- ভালো আছি.! তুমি.?

.

-- আর ভালো থাকা... তুই চলে যাওয়ার

পর থেকে বাড়িটা একদম

ফাকা হয়ে গেছে। কিচ্ছু ভালো লাগছে

না।

.

-- চাচি, তুমি মন খারাপ করো

না তো।

আস্তে আস্তে সব ঠিক

হয়ে যাবে।

.

-- হুমম। তা তুই ঠিক ভাবে

পৌছেছিস তো.?

.

-- হুমম, চাচি।

.

-- খেয়েছিস সকালে.?

.

-- হুমম, খেয়েছি। তুমি.?

.

-- আমিও। বাড়ি ভাড়া

পেয়েছিস.?

.

-- এখনো পাই নি তবে পেয়ে যাবো।

তুমি কোনো চিন্তা করো না।

.

-- হুমম।

.

-- চাচা, কই.? চাচাকে একটু

ফোনটা দাও, কথা বলি...

.

-- তোর চাচা তো বাড়িতে

নেই।

.

-- কেন, কোথায় গেছে.?

.

-- একটু বাজারে গেছে।

.

-- ওহ্...

.

-- হুমম।

.

-- চাচি, এখন তাহলে রাখছি।

পরে কথা বলবো, ঠিক আছে.?

.

-- আচ্ছা, রাখ। আর শোন, সাবধানে

থাকিস।

.

-- আচ্ছা, চাচি।

.

তারপর আমি কল কেটে দিয়ে

আবার হাটতে লাগলাম।

প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো কিন্তু আমি

এখনো থাকার মতো কোনো বাসা

খুজে পেলাম না।

সকাল থেকে শুধু হেঁটেই যাচ্ছি।

.

যার কাছেই বাসা ভাড়া চেতে যাচ্ছি সে-ই ফিরিয়ে দিচ্ছে। সবার একটাই কথা, "ব্যাচেলরদের জন্য কোনো বাসা ভাড়া নেই।"

এদের কথা শুনে মনে হচ্ছে ব্যাচেলর'রা মানুষ না।

এরা সব এলিয়েন, ভিনগ্রহের প্রাণী.!

আর এই শহরে শুধু বিবাহিত

নারী-পুরুষ'রাই থাকতে পারবে।

.

ওহ্ হ্যা, এত কথার মাঝে আমার পরিচয়টাই

তো দিতে ভুলে গেছি।

আমি শাহিন, শাহিন আলম.!

ঢাকা নামক ব্যস্ত শহরে এসেছি

পড়াশোনা করতে আর পেটের দায়ে।

আর এসেই বিপদে পড়ে গেছি। থাকার জন্য বাসা ভাড়া পাচ্ছি না।

এদিকে সন্ধ্যা প্রায় ঘনিয়ে এলো।

আসলে ঢাকাতে আমার কোনো

আত্মীয়-স্বজন নেই।

থাকলে হয়তো তাদের কাছে যাওয়া যেত।

.

তাছাড়া আমি সম্পূর্ণ একা একটা মানুষ। বাবা-মা ছোটবেলায় মারা গেছেন।

তারপর আমার চাচা আমার সব দায়িত্ব

কাঁধে নেন। আমি ছোটবেলা থেকে চাচা-চাচির

কাছেই মানুষ হই।

.

ভেবেছিলাম HSC পাশ করার পর ঢাকা শহরে এসে কোনো কাজ করবো আর তার পাশাপাশি লেখাপড়াটা চালিয়ে যাবো।

কতদিন-ই বা আর চাচা-চাচিদের

মাথার উপর বসে খাবো।

তাই আমার ঢাকা শহরে আসা। অবশ্য চাচা-চাচি আমাকে আসতে দিতে চাইছিলো না।

আমি জোর করেই চলে এসেছি। আসার সময় চাচি আমাকে জরিয়ে ধরে অনেক কান্নাকাটি করেছিল। আমি চাচির চোখের পানি মুছে দিয়ে চুপচাপ চলে এসেছিলাম। কারণ আমাকে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে। সংসারের হাল ধরতে হবে। যার কারণে আমি ঢাকাতে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে কাজ তো দূরে থাক, এখন পর্যন্ত থাকার জায়গাটায় খুজে পেলাম না। পোড়া কপাল আমার.!

.

.

.

আমি রাতের খাবারটা হোটেল থেকে খেয়ে রাস্তার পাশে, সোডিয়াম লাইটের নিচে একটা বেঞ্চের উপর বসলাম।

.

কি আর করা যাবে, বাসা যেহেতু পেলাম না তাই আজকের রাতটা না হয় রাস্তার ধারে বসেই কাটিয়ে দিব। প্রথমে ভেবেছিলাম বাসা ভাড়া না পেলে কোনো হোটেলে থাকবো কিন্তু পকেটে বেশি টাকা নেই।

তাই এখন আমার এই রাস্তার পাশে

বেঞ্চটাই সম্বল। এখানে বসেই পুরো রাতটা কাটাতে হবে। বাকিটা কাল সকালবেলা দেখা যাবে।

.

সারাদিন এদিক-সেদিক দৌঁড়াদৌড়ি করার কারণে শরীর প্রচন্ড ব্যথা করছে। তাছাড়া গতকাল রাতে ভালোভাবে ঘুমও হয় নি।

তাই ঘুমের কারণে এখন চোখ খুলে

রাখতে পারছি না। ঘুমে চোখ লেগে যাচ্ছে।

বারবার শুধু হাই তুলছি।

.

আমি ঘুমঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকিয় দেখলাম রাত প্রায় ১২ টা বাঁজে।

অনেক রাত হয়ে গেছে দেখছি.!

আমি আশেপাশে তাকালাম কিন্তু তেমন কাউকে দেখতে পেলাম না। রাস্তায় তেমন কোনো গাড়িও চলাচল করছে না। পুরো রাস্তা ফাকা। পরিবেশটা একদম নীরব.! শান্ত.! কোনো কোলাহল নেই।

শুধু কিছুটা দূর থেকে কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ ভেসে আসছে।

.

আমার একটু ভয় লাগা শুরু করলো। এত রাতে একা একা বসে আছি, আশেপাশে কেউ নেই, ভয় লাগাটাই স্বাবাভিক। ভাবলাম চোখ বন্ধ করে বসি থাকি, তাহলে ভয় লাগবে না। বাকিটা আল্লহ্'র উপর ছেড়ে দেই। তিনি যা করবেন ভালোর জন্যই করবেন.!

.

আমি চোখ বন্ধ করে চুপচাপ বসে থাকলাম। এছাড়া আমার আর কিছু করার নেই।

এদিকে মশা বাবাজি আমার পা কামড়ে ফুলে ফেলেছে।

আমি নীরবে মশার অত্যাচার সহ্য

করছি আর মনে মনে মশার

চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছি।

.

বেশ কিছুক্ষণ এভাবে বসে থাকার পর, যখন-ই চোখে একটু তন্দ্রা ভাব এসেছে হটাৎ অনুভব

করলাম কে যেন আমার কাঁধে হাত রাখলো।

আমি চমকে উঠলাম.!

সাথে সাথে চোখ মেলে তাকালাম। দেখি চল্লিশার্ধ বয়সের একজন লোক আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এত রাতে অচেনা একজন মানুষকে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। বেশ ঘাবড়ে গেলাম।

আমি কিছু বলার আগেই লোকটা

শান্ত গলায় বলে উঠলো,

.

-- কি ব্যাপার, এত রাতে রাস্তার

ধারে বসে কি করো.?

.

আমি কি উত্তর দিব ভেবে পেলাম না।

তবে লোকটাকে আমার একটু সন্দেহ হলো। ছিনতাইকারী নয় তো আবার.?

ঢাকা শহরে তো আবার এসব প্রতিভার

অভাব নেই।

.

আমি লোকটার কথার কোনো জবাব

না দিয়ে জড়সড় হয়ে বসলাম।

আমার চুপ করে থাকা দেখে

লোকটা আবার বলল,

.

-- কি হলো কথা বলছো না কেন.?

এত রাতে এখানে বসে কি করো.?

কোথাও যাবে নাকি.?

.

আমি এবারও কিছু বললাম না। ভ্রু-কুঁচকে লোকটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

লোকটা সহজ-সরল দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সত্যি বলতে এবার আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না।

লোকটার সহজ-সরল চেহেরা দেখে আমার মন গলে গেল। উনার মায়াভরা চেহেরা ক্রমশ

আমাকে আকৃষ্ট করতে লাগলো।

আমি কিছুটা সাহস পেলাম।

নিরীহ গলায় বললাম,

.

-- আসলে আমি ঢাকা শহরে লেখাপড়া করার জন্য এসেছি। এখানে আমার পরিচিত বলতে কেউ নেই। আর আমিও এখানে তেমন কাউকে চিনি না।

ঢাকাতে এসে, সেই সকাল থেকে বাড়ি খুজছি কিন্তু পাচ্ছি না। ব্যাচেলর বলে কেউ বাসা ভাড়া দিতে চাচ্ছে না, তাই এখানে বসে আছি।

.

লোকটা কিছুক্ষণ চুপ

থেকে বলল,

.

-- তোমার নাম কি.?

.

আমি সরাসরি উত্তর

দিলাম,

.

-- জ্বি, শাহিন আলম।

.

-- ওহ্। বাবা-মা কি করে.?

.

-- আমার বাবা-মা বেঁচে নেই। আমি বয়স

যখন পাঁচ তখন উনারা একটা

রোড এ্যাক্সিডেন্টে মারা যান।

.

-- ওহ্। স্যরি।

.

-- না, না... ঠিক আছে।

.

-- হুমম। তা কিসে পড়

তুমি.?

.

-- এখানেই কোনো একটা কলেজে

অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তি হবো।

.

-- ওহ্, খুব ভালো।

.

-- হুমম।

.

তারপর লোকটা কিছু সময় আমার

দিকে তাকিয়ে থাকলেন।

বিরস গলায় বলল,

.

-- ঠিক আছে, আমি তাহলে এখন যাই।

অনেক রাত হয়ে গেছে। বাড়ি যেতে হবে।

আর বাবা, তুমি এখানে বেশিক্ষণ থেকো না।

.

আমি ভ্রু-কুঁচকে

বললাম,

.

-- কেন.?

.

-- জায়গাটা ভালো না। প্রায় এখানে ছিনতাই হয়।

এই তো, কিছুটা দূরেই গুন্ডা-মাস্তানদের

আড্ডা বসে।

.

লোকটার কথা শুনে ভয়ে গলা শুকিয়ে

গেল। আমি লোকটাকে কিছু বলতে যাবো, তার আগেই লোকটা হনহন করে চলে গেল।

লোকটাকে বলতেও পারলাম না, আশেপাশে থাকার জন্য কোনো বাসা ভাড়া পাওয়া যাবে কিনা।

.

.

.

লোকটা চলে যাওয়ার পর, বেঞ্চে হেলান

দিয়ে বোকার মতো এখানেই বসে থাকলাম।

এছাড়া কি-ই বা করার আছে আমার।

কোথায় যাবো আমি.?

এই ইট-পাথরের শহরে কারও মন

বলতে কিছু নেই।

.

ঢাকাতে আসার সময় সবাই বলেছিল, এখানে ভালো মানুষ খুজে পাওয়া খুব মুশকিল।

সবাই আসতে বারণ করেছিল।

কিন্তু আমি কারও কথা শুনি নি। সবার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে, গ্রাম থেকে ঢাকা চলে আসি।

আসলে আমি চাচা-চাচিদের উপর আর বোঝা হয়ে থাকতে চাচ্ছিলাম না।

ঢাকাতে এসে কাজ আর লেখাপড়া করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আফসোস, এখন পর্যন্ত

কোনটাই হলো না।

.

বেঞ্চের উপর চুপ করে বসে, সামনের দিকে তাকিয়ে আছি হটাৎ দেখলাম সেই লোকটা আমার দিকে আসছে।

আমি অবাক হলাম.! কিছুটা খটকাও

লাগলো। লোকটা আবার এদিকে

আসছে কেন.?

এই লোকটাই ছিনতাইকারী নয় তো আবার.?

কথাটা ভেবেই আমি ভয়ে একদম জমে গেলাম। কি করবো ভেবে পেলাম না।

শুধু এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।অচেনা, অজানা,সেই লোকটা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো.!

.

.

.

.

.

.

.

.

.

.

.

.

.

.

.

চলবে...????

.

#প্রেম_বিশেষজ্ঞ

.

(গল্পের ১ম পার্ট'টা কেমন হলো কমেন্টে জানাবেন।আর ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কারণ আমরা মানুষ মাত্রই ভুল।)

.

ধন্যবাদ.!

হ্যাপি রিডিং ♥♥♥